ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছে বোঝা দায়!
" শৈলপুত্রী মহামায়ে সর্বসৌভাগ্যদায়িনী। " " সর্বক্লেশ হরে দেবী সর্ববিঘ্নবিনাশিনী।। " " নমস্তে বরদে শুভে সর্বঐশ্বর্য্যমন্ডিতা। " " প্রণমামি জগন্মাতঃ সর্বাভরণভূষিতা। "
1/1/20181 min read


দিনক্ষণ সব ঠিক। গাড়ী তৈরী। তৈরী সারথীও! সঙ্গে তৈরী শৈলপুত্রী মা আর তাঁর সন্তানেরা। মা যাবেন জলপাইগুড়ির বোদাগঞ্জে - জঙ্গলাকীর্ণ ভ্রামরীদেবীর মন্দিরে। ইচ্ছে বোনের সঙ্গে একটু দেখাসাক্ষাৎ আর একসাথে পূজা ও হবনে স্নিগ্ধ হয়ে ভক্তের কল্যাণ!
এপর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল! মা শৈলপুত্রী ইচ্ছেময়ী। নিজের ইচ্ছেয় যাচ্ছেন বোনের বাড়ী। তাতে কার কিইবা বলার থাকতে পারে? তবে এমন কিছু জীব আজও আছে যারা বাহ্যিকভাবে সজীব না হয়েও লোকচক্ষুর অন্তরালে ভীষণভাবে সজীব। তারা মানুষের ভাষায় কথা বলে! কিভাবে?
আরে ভাই সেটা বলার জন্যই যে এই প্রতিবেদন!
মঙ্গলবার রাতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। রাত তখন প্রায় ২টা। বৃষ্টিস্নাত কলকাতা ঘুমিয়ে কাদা। অঘোরী আচার্য্য রণব্রত একটু তাড়াতাড়ি শয্যাগ্রহন করেছেন! জোলো হাওয়ার শীতের আমেজ। ঘুমিয়ে পড়তে দেরী হয়নি তাঁর।


হঠাৎ শুনতে পেলেন অতিপরিচিত সেই দিব্য কন্ঠস্বর - কিরে রণো, ঘুমোলি? আচার্য্য রণব্রতের এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এর আগেও অনেকবার মা শৈলপুত্রীর সাথে কথা হয়েছে তাঁর! চোখমেলে দেখলেন ঘরের উত্তর-পূর্বকোনে জ্যোতির্ময়ী মাতৃমূর্তি! অন্ধকারে আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছে! কোথায় অন্ধকার? জ্যোতির্ময়ী দেবীমায়ের আগমনে তারা সব যেন গা-ঢাকা দিয়েছে!
ওরে রণো, শোন বাছা! ভ্রামরীপীঠের যাত্রা এবার আর হয়ে উঠবেনা!"
"কেন মা? আমার কি কোনো অপরাধ হয়েছে?"
উদ্বিগ্ন আচার্য্যদেবের প্রশ্নের উত্তরে মা হেসে বললেন - "না, না, তা কেন? কোনো অপরাধ হয়নি তোর! তুই খুব বড় একটা ভুল করতে যাচ্ছিলিস, বাবা! এতগুলি অন্ধকারের জীবকে প্রেতপক্ষে অভূক্ত রেখে কিভাবে আমায় নিয়ে বাইরে যাবি তুই? সামনেই মহালয়া যে!"
বললেন "রাতে ওরা এসেছিল আমার কাছে দরবার করতে! ওরা আমায় কি বলল জানিস?"
"কেন মা? কি বলেছে তোমায় ওরা?"
"অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখে আলোয় মা তুই নাইতি যাবি?
গেলে মা তুই, জেনে রাখিস বড় পুতের মাথা খাবি!"
বলেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন সেই জ্যোতির্ময়ী! আচার্য্য রণব্রত চিৎকার করে উঠলেন -
"দাঁড়া মা, একটু দাঁড়া! একটা কথা শোন !" বলেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন বিছানায়! ঘামে সারা শরীর ভেসে যাচ্ছে। বৃষ্টি কখন থেমে গেছে। ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আস্তে আস্তে উঠে ঘরের আলো জ্বালিয়ে একগ্লাস জল খেলেন তিনি। মনে এক তীব্র উৎকন্ঠা - সব আয়োজন সম্পূর্ণ! এবারের তীর্থযাত্রার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পূণ্যার্থী মহলানবীশ মশাই নিজের স্করপিওতে মাকে নিয়ে যাবেন ভ্রামরীপীঠে। কি হবে এখন? বুধবার সকাল ৮টা বাজার আগেই আচার্য্যদেব ফোন করলেন আমায়। খুলে বললেন বিগত রাত্রির অভিজ্ঞতা! পরামর্শ চাইলেন - এখন তাঁর কি করা উচিৎ। বললাম - মা তো ঠিক কথাই বলেছেন ভাই! তোমার ড্রয়ারে যাদের রেখেছ, প্রেতপক্ষে তাদের অভুক্ত রাখলে চলে? আমার মনেহয় মায়ের ইচ্ছাই শিরোধার্য করা উচিৎ! আবার যখন মায়ের ইচ্ছে হবে, মা নিশ্চই বলবেন। বুধবার ১০টার মধ্যে মহলানবীশ মশাই নিজেই ফোন করে জানালেন তাঁর কাকা দেহ রেখেছেন, তাই যাত্রা স্থগিত রাখতেই হবে। সংবাদ পেয়ে আচার্য্যদেব আর আমি খুব একচোট হেসেনিলাম। ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করবে কে? বিশ্বজগত যে তাঁর ইচ্ছায় চলে!
মা শৈলপুত্রীর অলৌকিকতায় বাকরুদ্ধ সাবানা ইয়াসমিনের বিনম্র প্রতিবেদন।
" জয় মা শৈলপুত্রীর জয়! "